সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম রিং আইডি চালু এবং ‘রিং আইডি কমিউনিটি জবস মেম্বারশিপ’ খাতে বিনিয়োগ করা টাকা ফেরতের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে অবস্থান নিয়েছেন গ্রাহকরা। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তাদের এ অবস্থান নিতে দেখা যায়।
কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া নিয়ামুল হক সুমন বলেন, ‘রিং আইডির একজন গ্রাহকের মামলার ভিত্তিতে তদন্ত করতে গিয়ে এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। মামলার তদন্ত করতে এত সময় লাগবে তা আমাদের জানা ছিল না। এখন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। আমাদের অনেকে জবস মেম্বারশিপে বিনিয়োগ করার জন্য বিভিন্ন এনজিও, সমিতি এবং ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছে। এখন এই লোনগুলো সুদসহ পরিশোধ করতে সবাইকে নিঃস্ব হতে হচ্ছে।’
একসময় প্রবাসে থাকা নিয়ামুল হক সুমন বলেন, ‘আমার নিজের উপার্জনসহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এবং আমার মা ও বোনের অলংকার বন্ধক রেখে প্রায় ৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। এখন আমি বাসায় থাকতে পারছি না। এই জীবন আমার ভালো লাগছে না। এর জন্য আমি সাদা কাপড় পরে এখানে আসছি, মরলে এখানেই মরব।’
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া মোহাম্মদ সুমন রানা বলেন, ‘করোনাকালে চাকরি চলে যাওয়ায় আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে রিং আইডির খবর পাই। পরে ধারদেনা করে মোট ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করি। সেখান থেকে ধাপে ধাপে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারি।
‘পরে ২০২১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে রিং আইডির অ্যাকাউন্ট সরকার ফ্রিজ করে দিলে সকল গ্রাহকের লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমরা সরকারের কাছে রিং আইডির ফ্রিজ একাউন্ট খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
অবস্থান কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কয়েকজন গ্রাহক অংশ নিয়েছেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা প্রতিদিন সকাল ৯টায় প্রেস ক্লাবে আসেন এবং বিকেল ৫টায় চলে যান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এখানে আসবেন বলে জানিয়েছেন।
রিং আইডিতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন- এমন অভিযোগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে একজন ভুক্তভোগী মামলা করেন।
গত ১ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান থেকে রিং আইডির পরিচালক সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরদিন তাকে দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সিআইডি জানিয়েছে, অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে উপার্জনের কথা বলে প্রতিষ্ঠানটি জনগণের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
গত বছরের মে মাসে ২৩ কোটি ৯৪ লাখ, জুন মাসে ১০৯ কোটি ১৩ লাখ, জুলাই মাসে ৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের মতো তারাও অস্বাভাবিক ডিসকাউন্টে বিভিন্ন প্রোডাক্ট বিক্রি এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করে আসছিল।