সাতক্ষীরার দুই বন্ধু শাহিন আলম ও শেখ শাকিল হোসেন। হঠাৎ পেয়ে বসে চাঁদে জমি কেনার শখ। ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করে পেয়েও যান চাঁদের জমি ‘পাইয়ে দেয়া’ একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ঠিকানা।
দেরি না করে দুই বন্ধু অনলাইনে চুকিয়ে দেন দাম। আর ঠিক এক সপ্তাহ পর হাতে আসে চাঁদের জমির কাঙ্ক্ষিত দলিল। সেই সঙ্গে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকট প্রতিবেশীর ‘নাগরিকত্বও’ পেয়েছেন তারা।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র শাহিনের বাড়ি শ্যামনগর উপজেলার পাতাখালি গ্রামে। তার বন্ধু শাকিল থাকেন সাতক্ষীরা সদরের জোড়দিয়া গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্র তিনি।
শাহিন বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ আগে ফেসবুকে দেখি মঙ্গলগ্রহে মানুষ নাকি জমি কিনছে। কৌতূহল থেকে বিষয়টি নিয়ে আমরা ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করতে থাকি। সে সময়েই জানতে পারি চাঁদেও কেনা যায়।
‘লুনার অ্যাম্বেসি নামের একটি ওয়েবসাইট আছে, যেখানে চাঁদ-মঙ্গলগ্রহের জমি বিক্রি হয়। দেখলাম চাঁদে জমির দাম একদম কম, একর প্রতি ২৪ দশমিক ৯৯ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৪৯৯ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ২ হাজার ১২৫ টাকা থেকে ৪২ হাজার ৪৩৭ টাকা। কোন ধরনের জমি কিনব, তার ওপর ওঠানামা করে দাম।’
এরপর শাহিন ও শাকিল ৫৫ ডলারে (সাম্প্রতিক বিনিময় মূল্য হিসেবে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ টাকা) চাঁদে এক একর জমির অর্ডার দেন। কীভাবে নিশ্চিত হলেন ওয়েবসাইটটি ভুয়া নয়, এমন প্রশ্নে শাহিনের জবাব, ‘আমরা ওই ওয়েবসাইট নিয়েও ঘাটাঘাটি করেছি। দেখেছি অনেক সেলিব্রিটি সেখান থেকে চাঁদে-মঙ্গল গ্রহে জমি কিনেছেন। তাই সাহস করে অর্ডার দিয়েছি। এক সপ্তাহ আগে অর্ডার দিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা পরিচিত একজনের কার্ডের মাধ্যমে পে করেছি।
‘আজ (বুধবার) আমাদের কাছে মেইল আসে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। তারা চাঁদে আমাদের কেনা জমির দলিল পাঠিয়েছে। চাঁদের গায়ে জমি চিহ্নিত করে ছবিও দিয়েছে।’
এই জমি ভোগদখল যে করা যাবে না, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই শাহিনের। বলেন, ‘আসলে এটা তো সম্ভব না জানেনই। সত্যি বলতে গেলে ওই দলিলটাই মূল।
‘যিনি ওই ওয়েবসাইট চালান, তিনিও তো চাঁদের মালিক না। মনে করেন উনি নিজে নিজে চাঁদের ইজারা নিয়ে জমি বিক্রি করছেন। মানুষ টাকা দিয়ে আসলে চাঁদের জমির ওই দলিলটাই কেনে। চাঁদে গিয়ে ওই জমি বুঝে নেয়ার তো সুযোগ নাই। ওই ওয়েবসাইটেও কোথাও বলা নাই যে, তারা আমাদের নিয়ে গিয়ে জমি বুঝিয়ে দেবে।’ চাঁদের দলিল পেয়ে ‘বিখ্যাতদের’ সারির একজন ভাবতে ভালোই লাগছে শাহিনের। তিনি বলেন, ‘অনেক বিখ্যাত লোকজনের নাম ইন্টারনেটে আছে যে, তারা চাঁদ-মঙ্গল গ্রহের জমির মালিক। এর মধ্যে সাবেক তিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, জিমি কার্টার ও রোলান্ড রিগ্যান আছেন। তাদের সঙ্গে এখন আমাদের (শাহিন ও শাকিল) নামও জুড়বে। নামেমাত্র হলেও আমরাও এখন চাঁদের জমির মালিক। বাংলাদেশে সম্ভবত আমরাই প্রথম চাঁদে জমি কিনলাম।’
যা আছে শাহিন ও শাকিলের দলিলে
চাঁদের জমির দলিলের প্রথম পাতাতেই দেয়া আছে একটি সার্টিফিকেট, যাতে লেখা- চাঁদের সি অফ ক্লাউড নামের অংশে একখণ্ড জমির মালিক হিসেবে আন্তর্জাতিক লুনার ল্যান্ড রেজিস্ট্রির নথিভুক্ত হয়েছেন শাহিন আলম ও শাকিল হোসেন।
এর পরের দুই পাতায় জমি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য এবং চাঁদের মানচিত্রে সেই কথিত জমির ছবি দেয়া আছে।
আরেকটি পাতায়, শাহিন ও শাকিলকে চাঁদের নাগরিকত্বের ‘স্বীকৃতিও’ দেয়া হয়েছে। কল্পিত সেই রাষ্ট্রের নাম ‘লুনার রিপাবলিক’।
চাঁদের জমি বিক্রি করছে কারা
লুনার অ্যাম্বেসি নামের ওয়েবসাইটে গিয়ে জানা যায়, ড্যানিশ এম হোপ নামের এক আমেরিকান নাগরিক ১৯৮০ সালে জাতিসংঘ এবং আমেরিকান ও রাশিয়ান সরকারের কাছে চাঁদের মালিক হওয়ার ঘোষণাপত্র দেন। এরপর ১৯৯৬ সাল থেকে ওয়েবসাইট খুলে বসে চাঁদে জমি বিক্রি শুরু করেন তিনি। ভাইস ডটকমে ড্যানিশ এম হোপের একটি সাক্ষাৎকার পাওয়া গেছে। সেখানে তিনি দাবি করেন, তিনি শুধু চাঁদই নয়, মঙ্গল, শুক্র, বুধেরও ‘মালিক’।
সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ১৯৮০ সালে তার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। তখন আর্থিক অবস্থাও ভালো ছিল না। এক রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে মনে হলো এর মালিক হবেন, সেই জমি বিক্রি করে খুলবেন উপার্জনের পথ।
এরপর অনেক পড়াশোনা করে ড্যানিশ জানতে পারেন, পৃথিবী ছাড়া সৌরজগতের আর কোথাও ব্যক্তি মালিকানা নেই। এরপরই চাঁদ ও আটটি গ্রহের মালিকনা দাবি করে তিনি চিঠি পাঠান জাতিসংঘে।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, মালিকানা নিতে কোনো আইনি বাধা থাকলে যেন তাকে জানানো হয়। তবে সেই চিঠির কোনো জবাব দেয়নি জাতিসংঘ। আর যায় কোথায়, সেই থেকে চাঁদ এবং আটটি গ্রহের মালিক বনে গেছেন ড্যানিশ এম হোপ।